,


শিরোনাম:
«» ভুল তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করায় এনবিআর সদস্য কায়কোবাদের প্রতিবাদ «» অনন্যা সাহা (স্বাতী) ৩২তম জন্মদিন। «» বৈষম্যবিরোধীদের ওপর অতর্কিত হামলা, আইসিইউতে ২ ছাত্রী «» হিন্দুদের সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলল ইউনুসের সরকার, বলল… «» নতুন আঙ্গিকে আরো সু-পরিসরে ব্রাদার্স ফার্নিচার লি: এর শো-রুম এখন বরিশাল «» উদ্যোক্তা হাটের ২০২৪ এওয়ার্ড প্রদান «» উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউল ইসলামের অপসারণ ও পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন। «» ধর্মনিরপেক্ষতা খারিজের পক্ষে ইউনূস সরকার «» ভন্ডপীর সাঈদ আনোয়ার মোবারকী বাবুর বিরুদ্ধে মানববন্দন ও প্রতিবাদ সমাবেশ। «» গাইবান্ধায় ভুয়া প্রেসক্লাব খুলে কথিত সাংবাদিকরা হেনাস্তা করছে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী ও ব্যবসায়ীদের

“যুব উন্নয়ন সংসদ, ঢাকার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস উপলক্ষে সিম্পোজিয়াম”

“যুব উন্নয়ন সংসদ, ঢাকার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস উপলক্ষে সিম্পোজিয়াম”
স্বদেশ বাংলা ডেস্কঃ
ইসলাম ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চাই দেশকে মাদকের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে পারে
এন বি আর এর সাবেক চেয়ারম্যান
— ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ

*প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা মাদকের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হচ্ছে
*দেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ মাদকাসক্ত
*মাদকের কারণে মেধাহীন প্রজন্ম গড়ে উঠছে

আজ ২৬ জুন, বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে যুব উন্নয়ন সংসদ, ঢাকার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস উপলক্ষে মাদকের ভয়াবহতা, যুব সমাজের নৈতিক অধ:পতন ও আজকের বাংলাদেশ শীর্ষক সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়। সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ইসলাম ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চাই পারে মাদকের ভয়াবহতা থেকে বাঁচাতে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. আদর্শের যথাযথ অনুসরণই মাদকের ভয়াবহতা থেকে আমাদের যুব সমাজকে বাঁচতে পারে। ইসলাম ধর্মের নৈতিক শিক্ষায় পার আমাদের সমাজ মাদকসহ অপরাধ থেকে বাঁচাতে। কিশোর গ্যাং, খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের পেছনে মাদকের অবৈধ ব্যবসা ও অপব্যবহার অন্যতম কারণ। মাদকাসক্তদের ৮০ ভাগ তরুণ-যুবসম্প্রদায়। তাই পরিবার থেকে বাবা ও মাকে সন্তানের ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে মাদক থেকে দূরে থাকার জন্য। ১৯৮৭ সাল থেকে ২৬ জুন জাতিসংঘ ঘোষিত মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও যুব উন্নয়ন সংসদ, ঢাকার চিফ কোঅর্ডিনেটর মুহাম্মদ কামাল হোসাইনের সঞ্চালনায় সিম্পোজিয়ামের উপরে আরো আলোচনারাখেন মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, বিএসএমএমইউ বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আতিয়ার রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সাবেক সহ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোঃ সাইফুর রহমান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, প্রফেসর ড. দেওয়ান মো. সাজ্জাদ প্রমুখ। সিম্পোজিয়ামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক পরিষদের সভাপতি প্রফেসর নূর নবী মানিক।

প্রধান অতিথি ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, সমাজ বিজ্ঞানী ও অপরাধ বিশ্লেষকরা সামাজিক ও পারিবারিক অপরাধ বৃদ্ধির জন্য প্রধানত দায়ি করেছেন সারা দেশে মাদকের অবাধ বিস্তারকে। ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়, পারিবারিক শিক্ষার অপরিপূর্ণতা, আকাশ সংস্কৃতি, প্রযুক্তির অপব্যবহার, যেখানে সেখানে পর্ণোগ্রাফির ছড়াছড়ি এবং নৈতিক শিক্ষার অভাবেই দিন দিন এ সব অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সমাজ বিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, মাদকের ভয়াল থাবা পড়ছে তরুণ-তরুণীদের উপর ফলে ভবিষ্যতের কারিগররা একদিকে যেমন গড়ে উঠছে অনৈতিকতা ও মাদকের উপর ভর করে, তেমনি হ্রাস পাচ্ছে মানবিক মূল্যবোধ ও সৃজনশীলতাও। কারণ মাদক ও মাদকাসক্তি হচ্ছে এ্যালকোহল জাতীয় পানীয় যা সেবনের ফলে মস্তিস্ক, যকৃতসহ মানব দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে মারাত্মকভাবে বিধ্বস্ত করে দেয়। শুধু তাই নয় মাদকাসক্ত ব্যক্তি তার নিজ জীবন ও তার পরিবারের জীবনও বিপন্ন করে দেয়। এছাড়াও মাদক শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও চরম ক্ষতিকর বলে চিকিৎসকদের অভিমত।

বিএসএমএমইউ বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আতিয়ার রহমান বলেন, গাঁজা, ফেন্সিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, মদ, ধূমপানসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করে; তা অনেকেরই অজানা। মাদক সেবন করার কারণে স্মরণশক্তি ও মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। যৌনশক্তি নষ্ট হয় ও সেই থেকে বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় ও যুবক সমাজের মেধা নষ্ট করে দেয়। লিভার ও কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। মাদকের কারণে মেধাহীন প্রজন্ম গড়ে উঠছে আমাদের দেশে।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ থেকে মাদকের কারণে প্রতিবছর পাচার হয়ে যায় ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। ‘এর মধ্যে মেথামফেটামিন, হেরোইন এবং সিন্থেটিক ওপিওড যেমন বুপ্রেনরফিন এবং ফেনসিডিলের পাচার অন্তর্ভুক্ত। তাই প্রতিবেশী দেশগুলোর থেকে মাদক আগ্রাসন বন্ধ করতে রাষ্ট্রীয় ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি বলেন, দেশে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছে। প্রতি বছর মাদকের পেছনে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে শিশু ও নারীদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে ইয়াবা ছেলেদের মতো মেয়েরাও অবলীলায় গ্রহণ করছে। বিগত ১০ বছরে মাদকাসক্তির কারণে ২০০ মা-বাবা খুন হয়েছেন।
২৪ ধরনের মাদক চলে বাংলাদেশে। দেশে এখন পর্যন্ত ২৪ ধরনের মাদক উদ্ধার হয়েছে। দুই প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এসব মাদক। মাদকের প্রবেশপথ হিসেবে বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন ৩২টি জেলাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)।

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব হুমায়ুন কবির বলেন,  মাদকাসক্তি একটি রোগ। মাদকদ্রব্য, ধূমপান ও তামাক সেবন মানুষের অকালমৃত্যু এবং স্বাস্থ্যহানির অন্যতম প্রধান কারণ। মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে আমাদের তরুণ প্রজন্মের বিপথগামিতাও সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, বর্তমানে বাংলাদেশের বড় অংশের জনগোষ্ঠী কিশোর-তরুণ, যে কারণে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে বলা হয় ইয়ুথ ডিভিডেন্ট। বাংলাদেশে ৪৯ শতাংশ মানুষের বয়স ২৪ বা এর নিচে। অর্থাত্ ৪৯ শতাংশ জনগোষ্ঠী বয়সে তরুণ। বেসরকারি হিসাব মতে, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ। মাদকসেবীদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ। ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে, ইয়াবা সেবনকারী শতকরা ৮৫ ভাগই তরুণ যুবসমাজ! ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগই ধূমপায়ী এবং তাদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত, যা গবেষণায় প্রমাণিত। ধূমপানে অভ্যস্ততার মধ্য দিয়ে তরুণরা মাদকদ্রব্য সেবন শুরু করে থাকে। পরবর্তীকালে ইয়াবা, ফেনসিডিল, সিসা, হেরোইন, কোকেন, আফিস, কোডিন, মরফিন, এলএসডিসহ বিভিন্ন মরণনেশায় আসক্ত হয়।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সাবেক সহ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোঃ সাইফুর রহমান বলেন, পাঁচ শতাধিক মাদকাসক্তের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে তাদের ১৫০ টাকার মাদক লাগে। এ হিসাবে একজন মাদকাসক্ত বছরে ৫৪ হাজার ৭৫০ টাকার মাদকের জন্য ব্যয় করে। ২৫ লাখ মাদকাসক্ত বছরে ১৩ হাজার কোটি টাকার মাদক সেবন করে। এসব মাদকের পুরোটাই অবৈধভাবে দেশে আসছে। পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। মিয়ানমারের সঙ্গে মাত্র ২৭১ কিলোমিটারের সীমান্তের সবচেয়ে সক্রিয় মাদক রুটগুলো গোটা দেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আমাদের দেশের চার শ্রেণির মানুষ মাদক সেবন করে।  একটি হলো নিন্মবিত্তের মানুষ।  যুব সমাজ যারা হতাশার থেকে মাদক সেবন করে।  বিশ্ব বিদ্যালয় গুলোতে। এবং উপরের তলার মানুষ যারা বিভিন্ন ক্লাবে বসে পার্টি করে। জেলখানায় ৯৮ % মাদক মামলার আসামি।  ৪০% মাদক আবার কেনা বেচা হয় জেলখানায়।  বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ মাদকের প্রসার আরও বাড়বে। যে সরকার  বেনজির,  আজিজ, মতিউরের মতো লোক তৈরী করে, সেই সরকারের সময়ে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়।

আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস উপলক্ষে মাদকের ভয়াবহতা,  যুব সমাজের নৈতিক অধ:পতন ও আজকের বাংলাদেশ শীর্ষক সিম্পোজিয়াম বক্তারা বলেন, মানবতার মুক্তির অগ্রদূত আমাদের আদর্শ আমাদের নেতা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মাদককে সব পাপাচারের চাবি হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। হযরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) একবার জনগণকে সম্বোধন করে বলেন, তোমরা মদ্যপান থেকে বিরত থাক, কেননা, এটাই হচ্ছে সমস্ত দুষ্কার্য ও অশ্লীলতার মূল।

তারা আরও বলেন, মা- বাবা সন্তানকে সব সময় ভালোর প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। যদি সন্তান কোন খারাপ পথে চলে যায়, তাহলে তা থেকে ফিরে আসার জন্য, সন্তানের সঙ্গ দিতে হবে। খারাপ জগত গুলোর মধ্যে ‘নেশা’ একটি। সন্তান যাতে নেশা গ্রস্থ না হতে পারে। তাকে সেই শিক্ষা দিতে হবে। সন্তানকে ধর্মীয় মূল্যবেধের মাধ্যমে নেশা মুক্তরাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে মা-বাবা।

Share Button
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।
ঘোষনাঃ