ফিলিস্তিন ও ইউক্রেন নিয়ে বিশ্ব মোড়লদের দুমুখো নীতির সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী
স্বদেশ বাংলা ডেস্কঃ
ফিলিস্তিন ও ইউক্রেন নিয়ে বিশ্বমোড়লদের দুমুখো নীতির কড়া সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, ফিলিস্তিনের জায়গা-জমি দখল করে রাখা হলেও সেটা আক্রমণ নয়, কিন্তু ইউক্রেনের ভূমি দখল করা হলে সেটা আক্রমণ। কিন্তু দুই ভূখণ্ডের জন্য বিশ্ব মোড়লদের এমন দুমুখো নীতি কেন? আজ শুক্রবার সকালে গণভবনে জার্মানি সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ভূরাজনৈতিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট আমরা যুদ্ধ চাই না। যুদ্ধের ভুক্তভোগী আমরা। আমাদের বিশ্ব মোড়লরা দুইমুখো নীতিতে বিশ্বাস করে। এক জায়গা ফিলিস্তিনের সমস্ত জমি দখল করে রেখেছে, ওটা ইনভেশন না কিন্তু ইউক্রেনেরটা ইনভেশন। এই দুমুখো নীতি কেন হবে? সেটা আমার প্রশ্ন ছিল। আমি বলেছি। অনেকই সাহস করে বলবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নানাজনের নানা দুর্বলতা আছে, আমার কোনো দুর্বলতা নেই। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমার কাছে ক্ষমতা হলো “থাকে লক্ষ্মী যায় বালাই”- একটা কথা আছে না। আমার কাছে সেটাই। থাকলে ভালো, আমি দেশের জন্য কাজ করতে পারব। না থাকলে আমার কোনো আফসোস নেই। আমার যেটা লক্ষ্য ছিল, ২০২১ পর্যন্ত থাকতে হবে, বাংলাদেশকে একটা ধাপ তুলতে হবে, আমি সেটা করে দিয়েছি।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কাছে যুদ্ধ কীভাবে বন্ধ হবে সেটা জানতে চেয়েছি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা দেখা হলেও সেটা জানতে চাইব। আমি চাইব, যুদ্ধ বন্ধ হোক। আমার কথা আমি বলে যাব। যে বোঝার বুঝুক, না বুঝলে আমার কিছু আসে যায় না। পরিষ্কার কথা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি ক্ষমতায় আসব কি আসব না, আমি তো পরনির্ভরশীল হয়ে করি নাই। আমার একমাত্র নির্ভরতা দেশের জনগণ। আমি সব সময় চেয়েছি জনগণের সমর্থন, জনগণের সহযোগিতা পেয়ে… হ্যাঁ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পেয়ে, বন্ধুত্ব প্রয়োজন, দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন হবে। এখন বিশ্বটা গ্লোবাল ভিলেজ, অন্যের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের অনেক জিনিস কিনতে হচ্ছে, আমরা বাঁধা পাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে আমরা বলেছি যুদ্ধটা যখন শুরু হয়, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, সেটা ওই জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না। এটা সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন দেশে মুদ্রাস্ফীতি ছড়িয়ে পড়েছে।’ যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্ব কষ্ট পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর ক্ষতিকর প্রভাব শুধু একটা জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। এটা সারা বিশ্বে প্রভাব পড়ছে। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। সেটা বন্ধ করতে দাবি করেছি। আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু মিয়ানম সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাইনি, ঝগড়া করতে যাইলিশ আমরা ধৈর্য ধরেছি, আলোচনা করেছি, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি তাবা ফেরত নিক।
বৈশ্বিক এই সংকটময় পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এখন যে অবস্থা চলছে, আমি সকলকে বলেছি ধৈর্য ধরতে। আমরা লক্ষ্য রাখব, কোনো কিছুতে আমাদের উত্তেজিত হলে চলবে না। শান্ত মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। সেটা করে আমরা সুফল পাচ্ছি। আর যদি হিসাব করেন, দক্ষিণ এশিয়া-দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আমরাই কিন্তু সবচেয়ে সুস্থ অবস্থায় বিরাজ করছি। অন্য দেশগুলো কষ্ট পাচ্ছে।’ হাওর অঞ্চলে কৃষির যান্ত্রিকীকরণে সরকার ৭০ শতাংশ ও অন্যান্য অঞ্চলে ৫০ শতাংশ ভর্তকি দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমিও নির্দেশ দিয়েছি, মেশিনপত্র যা থাকবে সমবায়ের থাকবে। কৃষক নেবে। তেল-পানির খরচ দেবে, ব্যবহার করবে। তাহলে তো একক ব্যক্তির ওপর কৃষকদের নির্ভরশীল থাকতে হবে না। সেই উদ্যোগটা আমরা নিচ্ছি। আমার ওখানে আমি শুরু করেছি। এই মডেলটা আমি করব। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে একটি হারভেস্টর ও একটি এক্সক্যাভেটর এরই মধ্যে কিনে দিয়েছি। আমি বলেছি এটা কো- অপারেটিভ করে আমার দুই এলাকায় (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া) জমি পরিষ্কার ও চাষ করা।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের উৎপাদন কিন্তু বেড়েছে। কোনো জায়গায় উৎপাদন কমেনি। আমরা কৃষি ক্যালেন্ডার পাল্টে দিয়েছি। এখন সবকিছুই ১২ মাস পাওয়া যাচ্ছে। শিমের অ এখন আর শীতকালের অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। শোল মাছ দিয়ে লাউ এখন আমরা ১২ মাস খেতে পাচ্ছি।
সরকার কৃষির অন্যান্য খাতেও ৪৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘ভবিষ্যতে সেচকাজে বিদ্যুতের পরিবর্তে সোলার ব্যবহারের পরিকল্পনার করা হচ্ছে। এটি হলে বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে না। আমরা ধীরে ধীরে সেই পথে যাচ্ছি।’ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে অপপ্রচার, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি ও ড. ইউনূস প্রসঙ্গসহ বিভিন্ন বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের যে খাদ্যগ্রহণ বেড়েছে, ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে এটা স্বীকার করলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবেও কিনে মোটা করবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘আগে যেখানে প্রতিবছর দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত-আমি ১৯৮১ সালে দেশে আসার পরে লঙ্গরখানা খুলেছি—এখন কিন্তু সেই অবস্থা নেই। এখন মানুষের ভাত, কাপড়ের ব্যবস্থা আছে। আগে মানুষের পায়ে রাবারের স্যান্ডেলও ছিল না। এখনতো সেই অবস্থা নেই। এগুলো এমনি এমনি হয়নি। পরিকল্পনা করে কাজ করেছি বলেই উন্নতি হয়েছে।’ বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্বের উদীয়মান দেশগুলোকে নিয়ে একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরির চিন্তা করছেন কি না-এস প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সাধারণ একজন মানুষ। ছোট একটা ভূখণ্ডে বিশাল জনগোষ্ঠী। আমি সেটা নিয়েই ব্যস্ত। তবে কোথাও কোনো অন্যায় দেখলে আমি কণ্ঠ সোচ্চার করি। প্রতিবাদ করি। যুদ্ধ চাই না। শান্তি চাই-এই কথাটা বলি। কিন্তু কোনো প্ল্যাটফর্ম করবার মতো দক্ষতা আমার নেই। যোগ্যতাও আমার নেই। সেই চিন্তাও আমার নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, অনেক প্ল্যাটফর্ম হয়ে গেছে। কিন্তু আসলে তো কাজের সময় কাজে লাগে না। সেটা হলো বাস্তবতা। না হলে, আজ গাজায় যুদ্ধ বন্ধে নিরাপত্তা কাউন্সিলে প্রস্তাব আসে। সেখানে ভেটো দেওয়া হয়। বাংলাদেশের যুদ্ধ চলার সময়ও এই অবস্থাটা আমরা দেখেছি।