মোঃ মাছুম বিল্লাহ, ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি।
নিজে খাওয়ার জন্যই হোক আর অতিথি আপ্যায়নেই হোক, পানের সঙ্গে চুন না হলে যেন স্বাদই খোলে না। অন্যদিকে বাংলা প্রবাদ অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রেই ‘পান থেকে চুন খসলেই’ ধেয়ে আসে বিপদ। চুনের গুরুত্ব ও কদর তাই নেহাত কম নয়।
শামুক ও ঝিনুক থেকে খুব কসরত করে তৈরি করতে হতো এই চুন। এখন বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রে সেই চুন উৎপাদনের ঝক্কি কমলেও সঙ্গে সঙ্গে লাভও কমেছে। ফলে লোকসানের মুখে চুন উৎপাদনে যুক্ত অনেকেই পেশা ছেড়েছেন। এই পেশা টিকিয়ে রাখতে হলে সংশ্লিষ্টদের সহজ শর্তে ঋণসহ সরকারি সহায়তার দাবি জানান তারা।
দক্ষিণের জেলা ঝালকাঠিতে চুন তৈরিতে যুক্ত অনেক পরিবার। পৌর এলাকার পালবাড়ি সড়কে বেশ কয়েকটি পরিবার শত বছর ধরে বংশ পরম্পরায় চুন তৈরি করে আসছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাচীন পদ্ধতিতে শামুক ও ঝিনুক দিনরাত আগুনে পুড়িয়ে ঘানিতে গুঁড়া করে পানি মিশিয়ে তৈরি করা হতো এই চুন। কয়েক দফায় প্রক্রিয়াজাত শেষে এক তাফাল (কড়াই) খাওয়ার উপযোগী চুন তৈরিতে সময় লাগত ১০ দিন।
চুন তৈরির সনাতন এই পদ্ধতি বাদ দিয়েছে এই পরিবারগুলো। সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের বাউকাঠিতে এখন বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র দিয়ে তৈরি করা হয় চুন। এক তাফাল চুন তৈরিতে এখন সময় লাগে দুই থেকে তিন দিন।
চুনের প্রস্তুত প্রণালি জানিয়ে চুন কারিগর তারক সূত্রধর বলেন, শামুক-ঝিনুকের খোলস রোদে শুকিয়ে মাটির তৈরি চুলায় আগুনে পোড়ানো হয়। সেই পোড়া শামুক ও ঝিনুক চূর্ণ করে চালনি দিয়ে ছেঁকে মাটির গর্তে রেখে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে তিন ঘণ্টা বাঁশের হাতা দিয়ে নাড়লেই পাওয়া যায় ধবধবে সাদা প্রাকৃতিক চুন। সেগুলো নেটের কাপড় দিয়ে ছেঁকে বড় পাত্রে রাখা হয়।
চুন তৈরির খরচ কয়েক গুণ হয়েছে জানিয়ে কারিগররা জানান, বর্তমানে এক বস্তা শামুকের দাম ৩০০ টাকা, যা আগে ছিল মাত্র ৬০ টাকা। ফলে এক মণ চুন তৈরি করতে ৪০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়, যা বিক্রি হয় ৬০০ টাকায়। একজন চুন বিক্রেতা দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার টাকার চুন বিক্রি করেন। উৎপাদন খরচ, কারিগরদের মজুরি বাদ দিলে লাভ থাকে খুব সামান্যই। তাই তারা সহজ শর্তে ঋণসহ সরকারি সহায়তা প্রত্যাশা করছেন।
জানতে চাইলে ঝালকাঠি বিসিকের উপব্যবস্থাপক শাফাউল করিম বলেন, চুনশিল্প টিকিয়ে রাখতে বিসিকের তহবিল থেকে সহায়তা দেয়া হবে।
এ ধরনের আরো সংবাদ




